
নিজস্ব প্রতিবেদক: খুলনার তেরখাদা উপজেলার প্রাণভোমরা হয়ে উঠেছে ভূতিয়ার বিল।পদ্মফুলে মোড়া এই বিল এখন যেন এক প্রাকৃতিক চিত্রকর্ম—যেখানে ঢেউ খেলে বেড়ায় নরম জলের ছোঁয়া, আর পদ্ম-শাপলার সৌন্দর্যে বিমোহিত হন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা। তবে এই মোহনীয় রূপের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা ও জীবিকার সংকটের এক কঠিন বাস্তবতা।প্রাকৃতিকভাবে গঠিত এই বিলের আয়তন প্রায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। বর্ষাকালে এর ৪০-৫০ হেক্টর জায়গা জুড়ে ফুটে থাকে পদ্মফুল—যা এক অনন্য সৌন্দর্য তৈরি করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বিলের বাকি বিশাল অংশে এখন শেওলা ও আগাছার দাপট, যা পানি চলাচল ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য দুটোকেই ব্যাহত করছে।তেরখাদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিউলি মজুমদার বলেন, “ভূতিয়ার বিলের একটি ক্ষুদ্র অংশে পদ্ম-শাপলার অপার সৌন্দর্য রয়েছে, কিন্তু সিংহভাগ এলাকাই এখন পানি চলাচলের অযোগ্য। এর ফলে কৃষিকাজে ধস নেমেছে, যা স্থানীয়দের জন্য চরম জীবনসংকট তৈরি করেছে।”২০০৩ সাল থেকে শুরু হওয়া জলাবদ্ধতা প্রায় দুই দশক ধরে স্থায়ীভাবে স্থবির করে রেখেছে কৃষি ও মৎস্য নির্ভর এই জনপদের জীবনধারা। যারা একসময় কৃষিকাজ, মাছ ধরা কিংবা বিলের সৌন্দর্য ঘিরে মৌসুমী আয়ের ওপর নির্ভর করতেন, তাদের অনেকেই এখন নৌকা চালিয়ে শাপলা-শালুক সংগ্রহ বা মৌসুমী মাছ ধরার মাধ্যমে কোনোরকমে জীবিকা চালাচ্ছেন।তবে এই সংকটের মধ্যেও আশার আলো দেখছেন অনেকে। পদ্মবিল ঘিরে এখন পর্যটকের আনাগোনা বাড়ায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল আফরোজ স্বর্ণা বলেন, “পদ্মফুল কেন্দ্রিক পর্যটন এখন একটি বড় সম্ভাবনা হয়ে উঠছে। এ সম্ভাবনাকে টেকসই পর্যায়ে নিতে বিল সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”একসময় ভূতিয়ার বিল ছিল দেশি মাছের অন্যতম প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র। কৈ, শিং, মাগুর, টাকি-সহ নানা প্রজাতির মাছ এখানে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠত। কিন্তু এখন পানির গুণগত মান ও জলজ পরিবেশের অবনতির কারণে এসব মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে।তবে স্থানীয় পর্যটনের অগ্রগতি কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়েছে। বর্ষার মৌসুমে ছোট ছোট নৌকা করে বিল ভ্রমণ, পদ্মফুল সংগ্রহ, গ্রামীণ খাবারের স্বাদ নেওয়া এবং প্রকৃতির নিসর্গ উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এই অঞ্চলে আসছেন। এর মাধ্যমে কিছু মৌসুমী কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে।এলাকার বিশিষ্টজনেরা বলছেন, ভূতিয়ার বিলের সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এটি একটি মডেল ইকো-ট্যুরিজম এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন দূরদর্শী পরিকল্পনা, স্থানীয়দের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ।